নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি

১) নেশা মিত্র প্রোগ্রামে প্রত্যেকটা সদস্যকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়। জাতি, ধর্ম ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ওদের বৈষম্য করা হয় না।প্রত্যেকটা সদস্যকে সম্মোধন করা হয় মিত্র বা বন্ধু বলে।
২) প্রত্যেকটা সদস্যের জীবিকা নির্বাহের উপর খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বেকারত্ব নেশার দিকে আকর্ষিত করে।জীবিকা উপার্জন সামাজিক মর্যাদা ফিরিয়ে আনতেও সাহায্য করে।
৩) যারা কর্মরত, তাদের নিজের কাজে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে যেতে সর্বতোভাবে সাহায্য করা হয়।
৪) যাদের কাজ নেই, তাদের কর্মসংস্থানে সাহায্য করা হয়। এছাড়াও স্থানীয় চাহিদার উপর ভিত্তি করে "সোশাল এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ মডেল" এ নতুন কাজ সৃষ্টি করা হয়।
৫) কোন সদস্য ও উচ্চশিক্ষা, "স্কিল ট্রেনিং" অথবা চাকুরীর পরীক্ষার জন্য ইচ্ছুক হলে, তাকেও সর্বতোভাবে সহায়তা করা হয়।
৬) যে কোন প্রজেক্ট শুরু করার আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা কর্মরত উদ্যোগী কর্মচারীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে প্রোগ্রাম রোড ম্যাপ তৈরি করা হয়।
৭) প্রত্যেক সদস্যের বৈজ্ঞানিক উপায়ে ওদের "লাইফ স্ট্রাটেজি" বানাতে সাহায্য করা হয়। আমাদের কমিটির একজন সদস্য "স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং" নিয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থাকেন।
নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির পরিবার

যে কোন নেশা মুক্তি সংগ্রাম তখনই সফল হলে যদি ওদের পরিবারের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া রেখে কাজ করা যায়। পরিবারকে সময় দেওয়া এবং পরিবারের মনের কথা ব্যক্ত করার সময় দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবারের লোক কোন কাজ করতে চাইলে ওদের সর্বতোভাবে সাহায্য করা এবং তাদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করা অত্যন্ত আবশ্যক।
নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মা, স্ত্রী অথবা মেয়েকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে "নেশামিত্র পুনর্বাসন পরিকল্পনা" তৈরী করা হয়। উপরোক্ত মহিলাদের নামে "নেশামিত্র ফ্যামিলি ইউনিক কার্ড" এবং প্রয়োজন বিশেষে "ফ্যামিলি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট" তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
নেশাগ্রস্ত লোকের পরিবারকে এ ব্যাপারে অবহিত এবং আস্থাভাজন করা যে একাধিকবার চেষ্টা করলেই নেশা রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
পরিবারের নিরন্তর অবিশ্বাস ও সমালোচনামূলক মনোভাব নেশাগ্রস্থদের নেশা ছাড়ার পরও বারবার নেশার পথে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
পরিবারের লোকজনদের সংকটমোচন দল এর সঙ্গে সব সময় সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়।
নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির শিশুরা

গবেষণা থেকে জানা গেছে যে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির শিশুদের বিকাশ গভীরভাবে প্রভাবিত হয়।ওদের জীবন ধারণের বেসিক নীডস অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক মর্যাদা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গবেষণার মাধ্যমে আরও জানা গেছে যে এই বাচ্চাদের প্রথম থেকেই শনাক্ত করে সাহায্য করলে এরা পরবর্তী সময়ে সাধারণভাবে জীবনযাপন করতে পারে।
এই শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ ভালো ছাত্র হলে তাদের আর্থিক ও মানসিকভাবে সাহায্য করা হয়। এছাড়াও ওদের কোনো বিশেষ প্রতিভা থাকলে তাদের অনুপ্রাণিত করা হয়। ওদের মানসিক ভীতি ও অনিশ্চয়তা নিয়ে কথা বলা হয় কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে।
সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা

যেকোনো সামাজিক প্রোগ্রামের সফলতার জন্য তার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তার জন্য স্থানীয় লোকজনদের জড়িত করা এবং তাদের মতামত জানা খুবই জরুরী। প্রত্যেকটি এলাকাতেই কিছু প্রভাবশালী লোক থাকেন। স্থানীয় লোকেরা ওদের শ্রদ্ধা করেন এবং ওদের কথা অনুসরন করেন। তাই এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করা এবং ওদের সঙ্গে আমাদের প্রোগ্রামের বিষয়ে আলোচনা করা অত্যন্ত আবশ্যক।
এটা খুবই স্বাভাবিক যে এই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রথম দিন থেকেই আমাদের মেনে নেবেন না, আমাদের কার্যক্রম বুঝতে কিছুটা সময় নেবেন। সেই জন্য ধৈর্য রেখে কাজ করে যাওয়া, অবিরত ঐ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা এবং সফল কেসগুলোকে "রোল মডেল" অথবা দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করলে স্থানীয় লোকজন উৎসাহিত বোধ করবেন।
আধ্যাত্মিক ক্ষমতার প্রয়োগ

বিশ্বব্যাপী গবেষণার মাধ্যমে এটা অত্যন্ত প্রতিষ্টিত তত্ত্ব যে, মানুষের আধ্যাত্মিক বিকাশ নেশার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার যে সব মানুষ এই শক্তিতে বিশ্বাস নাও করতে পারেন কিন্তু যারা এই শক্তিতে বিশ্বাস করেন, তারা বিভিন্ন ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক কার্যকলাপের মাধ্যমে এই শক্তিকে এর গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন নেশার চিকিৎসার জন্য।
প্রত্যেকটি এলাকাতেই বিভিন্ন ধর্মের ধর্মপ্রচারক বা ধার্মিক ব্যক্তি থাকেন। যাদের মধ্যে কেউ কেউ জনপ্রিয় ও মানুষের শুভাকাঙ্ক্ষী এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই ধরনের সামাজিক কাজে জড়িত হতে পারেন। ধর্মপ্রচারক বা ধার্মিক ব্যক্তি নেশামিত্র প্রোগ্রামের "আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞ" হিসেবে সম্বোধিত হন।
যারা উপরোক্ত পদ্ধতিতে বিশ্বাসী নন তারা বিভিন্ন ধরনের যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন এর মাধ্যমে তাদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বিকাশ করতে পারেন। নেশামিত্র প্রোগ্রামের আধ্যাত্মিক কার্যকলাপের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে নেশাগ্রস্তদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করা, কোনো অবস্থাতেই নেশাগ্রস্তগন যাতে কোন প্রকার অনুশোচনাগ্রস্ত বা হতাশ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
কোর কমিটির সদস্য যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন এর মাধ্যমে নেশাগ্রস্তগনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।